ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র
৪ হাজার ৫০১ ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করাহয় এর ইতপুর্বে নাম ছিল
ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র ২১শে এপ্রিল ২০১৪ ইং তারিখে একটি পরিপত্র জারির মাধ্যমে নাম পরিবর্তন করে রাখাহয়
"ডিজিটাল সেন্টার" এই নাম পরিবর্তন সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেই পরিবর্তন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার তাঁর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একযোগে দেশের ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে তথ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন।
এর মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের জনগণকে জাতীয় উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা হলো। ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র উদ্বোধনকালে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে ডিজিটাল বাংলাদেশের অভিযাত্রায় সকলকে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান। খবর বাসসর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সম্পদ, প্রযুক্তি কিংবা সংযুক্তি, কোনটাই বাধা নয়। আন্তরিকতা এবং সকলের অংশগ্রহণ ও সমর্থনে সকল বাধা দূর করা সম্ভব হবে বলে তিনি দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করেন।
এ সময় ভোলার চর কুকরি-মুকরিতে অবস্থানরত ইউএনডিপি প্রশাসক নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক, বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় এমপি আবদুলস্নাহ আল জ্যাকব ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। ঘাটের মাঝি আব্দুল আজিজ এবং কর্মজীবী মহিলা শারমিন আখতার তাঁদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। এছাড়া কিশোরগঞ্জের যশোদল ইউনিয়নে অবস্থানরত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বক্তব্য রাখেন। ভোলা জেলা প্রশাসক মেসবাউল ইসলাম ও কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক সিদ্দিকুর রহমান স্ব স্ব এলাকায় ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালন করেন। ভিডিও কনফারেন্সে আরও বক্তব্য রাখেন এটুআই প্রোগ্রামের জাতীয় পরিচালক মোহাম্মদ নজরম্নল ইসলাম খান।
'সারাদেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র উদ্বোধন করা হচ্ছে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সকল নাগরিকের কাছে তথ্যসেবা পেঁৗছে দেয়ার ৰেত্রে এটি একটি যুগানত্মকারী পদৰেপ। এর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাসত্মবায়নের কার্যক্রম আরও একধাপ এগিয়ে গেল বলে তিনি উলেস্নখ করেন ।
এ সময় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য তথ্য প্রযুক্তির লাগসই ব্যবহারের একটি রূপকল্প হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, "আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার 'দিন বদলের সনদ'-এ আমরা সকল নাগরিকের জন্য অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান, শিৰা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছি। দারিদ্র্য বিমোচনসহ সকল প্রতিশ্রম্নতি বাসত্মবায়নে প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগের একটি আধুনিক দর্শন_ ডিজিটাল বাংলাদেশ।"
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে ধনী-গরিব, শিৰিত-নিরৰর নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের জন্য এবং প্রযুক্তি বিভাজনমুক্ত।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে দেশের সব ক'টি জেলায় 'জেলা তথ্য বাতায়ন' উদ্বোধনের কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, বাতায়নগুলো সংশিস্নষ্ট জেলার শিৰা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ও জেলা প্রশাসন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তুলে ধরছে। পাশাপাশি এই বাতায়নগুলো সংশিস্নষ্ট জেলার এক একটি মুখপাত্র হয়ে উঠেছে।
একইভাবে গত ফেব্রম্নয়ারিতে দু'টি চিনিকলে পরীৰামূলকভাবে ডিজিটাল পুঁজি ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়। এই ব্যবস্থায় আখ চাষীরা অতি সহজেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত আখ বিক্রি করতে পারছেন।
তিনি বলেন, গত জুনে ১ হাজার ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। জুলাই মাসে একটি অনলাইন বস্নগ উদ্বোধন করা হয়। এই বস্নগে তৃণমূল পর্যায়ের ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের উদ্যোক্তারা সরাসরি জেলার উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁদের সমস্যা নিয়ে আলাপ করতে পারেন। অচিরেই এ ধরনের আরও বস্নগ তৈরি করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সেপ্টেম্বরে পরীৰামূলকভাবে যশোর জেলায় ওয়ান স্টপ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রানত্মিক জনগণ অতি সহজে এবং কম সময়ে বিভিন্ন সরকারী সেবা যেমন জমির দলিলের নকল এবং বিভিন্ন ধরনের আবেদন সরাসরি একই স্থান থেকে জমা ও গ্রহণ করতে পারছেন।
গত মাসে তথ্য অধিকার কমিশনের জন্য একটি আধুনিক ও তথ্য সমৃদ্ধ 'তথ্য বাতায়ন' উদ্বোধনের কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'আমরা দেশে কম্পিউটার সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় অচিরেই সরকারীভাবে অপেৰাকৃত কম খরচে কম্পিউটার বাজারজাত করবে। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের লৰ্য হলো প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদকে একটি জ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। যাতে এসব প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞানভিত্তিক দেশ প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে।'
শেখ হাসিনা বলেন, এসব কেন্দ্রে ইউনিয়নের সকল নাগরিক সহজে এবং সুলভে সকল ধরনের সরকারী সেবা যেমন বিভিন্ন সরকারী ফরম, তথ্য, বিভিন্ন প্রকার আবেদন আদান-প্রদান করতে পারবেন। সেই সঙ্গে কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, শিৰা, স্বাস্থ্য, আইন এবং মানবাধিকার বিষয়ে তথ্য পাবেন।
ইতোমধ্যেই বেশ কিছু কেন্দ্রে এসব সেবার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কম্পিউটার প্রশিৰণেরও ব্যবস্থা করার কথা তিনি বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্পের অধীনে যাঁরা কেন্দ্রীয়ভাবে এই কার্যক্রম বাসত্মবায়ন করছেন, তাদের এর উদ্যোগে সহযোগিতা দেয়ার জন্য তিনি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে জাতি ভাষার জন্য রক্ত দিতে পারে, যে জাতি স্বাধীনতার জন্য লাখো প্রাণ বিসর্জন দেয়, যে জাতি গণতন্ত্রের জন্য রাজপথ রঞ্জিত করে সে জাতির জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশের লৰ্যমাত্রা অর্জন অবশ্যই সম্ভব।
তিনি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়নত্মীতে ২০২১ সালে একটি দারিদ্র্যমুক্ত, সমৃদ্ধ ও অত্যাধুনিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
তথ্য কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলৰে ভিডিও কর্মসূচীতে 'স্বপ্ন ছোঁয়ার দিন' ও 'স্বপ্ন পূরণ' নামে দু'টি তথ্যচিত্র প্রচার করা হয়। দৈনন্দিন জীবনে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এই তথ্যচিত্র দুটিতে তুলে ধরা হয়েছে।
মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞগণ এবং উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, কিশোরগঞ্জের যশোদল ইউনিয়ন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। এ সময় প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরম্নল ইসলামের গ্রামের বাড়ি যশোদলে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ায় মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ভিডিও কনফারেন্সটি দেখার জন্য শত শত মানুষ হাজির হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে। প্রতিমন্ত্রী এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এ কাজে জয়ের বড় অবদান রয়েছে। এ জন্য জয়কে আমি ধন্যবাদ জানাই। যশোদল ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদ মিয়াও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন। কিশোরগঞ্জ থেকে ভিডিও কনফারেন্সটি পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান।