Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

তথ্যপ্রযুক্তিতে বিপ্লব ভূমি অফিসে ডিজিটাল

ভূমি অফিসে ডিজিটাল রেকর্ড রুম 
বাংলাদেশে সবচেয়ে জটিল প্রক্রিয়ার কাজ হচ্ছে জমির কাগজ বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুসন্ধান করা। আগের দিনে একটি জমির খতিয়ান পেতে আবেদন করলে ৬ মাস এমনকি এক বছর লেগে যেত। এখন তা পেতে সময় লাগে মাত্র তিনদিন! যে কেউ জমির খতিয়ান পেতে এখন আর অফিসেও যেতে হচ্ছে না। ডাক যোগে বা ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র থেকে আবেদন করলেই হচ্ছে। সাথে ফিরতি খামের সাথে ডাক টিকিট লাগিয়ে দিলেই সব কাজ শেষ। আগে অনেক টাকা ঘুষ লাগতো। কিন্তু এখন ঘুষ গ্রহণের কোন পথ খোলা নেই। একটি জমির খতিয়ান পেতে খরচ হচ্ছে সব মিলে ২৪ টাকা। সরেজমিন রাজশাহীতে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে ভূমি অফিসে চালু হয়েছে ডিজিটাল রেকর্ড রুম। রাজশাহীতে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে প্রায় তিন শতাধিক জমির খতিয়ানের আবেদন আসছে। কিন্তু কোন কাজই আগের মতো ধীর গতিতে হচ্ছে না। প্রত্যেক দিনের কাজ ওই দিনেই শেষ করা হচ্ছে। ফলে গ্রাহক তার আবেদনের তিন দিনের মধ্যেই কাগজ হাতে পেয়ে যাচ্ছেন। ভূমি অফিসের রেকর্ড রুমে গিয়ে দেখা গেল দুই জন পুরুষ এবং একজন নারী প্রত্যেকে একটি ল্যাপটপ হাতে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তারা জানালেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য তাদের এ কার্যক্রম মানুষ শত বছর মনে রাখবে। অভাবনীয় এই উদ্যোগের জন্য তারা সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

হাজার টাকার কাজ এখন ২৭ টাকায়! 
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল হওয়ায় বেড়েছে গ্রাহক সেবার মান। কমেছে দুর্নীতি আর গ্রাহকদের ভোগান্তি। ভলিউম, রেকর্ডপত্র ও পর্চা, নকশাসহ প্রয়োজনীয় নথি এখন যথাযথভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে। যে পর্চা উত্তোলনে আগে মাসের পর মাস সময় লাগতো তা উত্তোলনে এখন সময় লাগছে এক সপ্তাহ। আগে একটি পর্চা তুলতে এক হাজার থেকে পনেরশ’ টাকা লাগতো। সেখানে এখন মাত্র ২৭ টাকায় পর্চা ও নকশা উত্তোলন করা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ইনফরমেশন সেলে পর্চা বা নকশার জন্য নির্ধারিত সবুজ কাগজে ২৭ টাকা কোর্ট ফিসহ আবেদন করতে হয়। আবেদন করার পর উক্ত শাখা থেকে পর্চা উত্তোলনে সময় দেয়া হয় ৭ দিন। (উল্লেখ্য, এই নিয়মে একজন আবেদনকারী একের অধিক পর্চা উত্তোলন করতে পারেন না)। নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হলে পুনরায় ১৫ দিন, ক্ষেত্রবিশেষে এক মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়। ভলিউম পাওয়া না গেলে এক পর্যায়ে রেকর্ড রুম থেকে আবেদনপত্রের গায়ে লিখে দেয়া হয় ভলিউমের পাতা ছেঁড়া তাই সার্টিফাইড কপি সরবরাহ করা সম্ভব হলো না।

দেশের প্রথম ডিজিটাল ভূমি অফিস ফটিকছড়িতে
দেশের প্রথম ডিজিটাল (স্বয়ংক্রিয়) ভূমি কার্যালয় চালু হয়েছে ফটিকছড়িতে। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি কার্যালয়টির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এটি চালুর ফলে নিখুঁত ও নির্ভুল ভূমি ব্যবস্থাপনা, কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া, নামজারি, নথি হালনাগাদ করা এবং কম সময়ে ভূমি সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও খতিয়ান পাওয়া যাচ্ছে। ফটিকছড়ি উপজেলার সাড়ে ৬ লাখ মানুষ ছয়টি ইউনিয়ন উপকেন্দ্রের মাধ্যমে এর সুবিধা ভোগ করছে। সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে উপজেলার ৬টি উপকেন্দ্র বিবিরহাট, নাজিরহাট, ধর্মপুর, ছাড়ালিয়াহাট, ভূজপুর ও নারায়ণহাটে টাওয়ার বসিয়ে রেডিওলিংকের মাধ্যমে সদর কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। কাজের সুবিধার জন্য প্রধান কার্যালয়সহ উপকেন্দ্রগুলোকে দেওয়া হয়েছে জেনারেটরসহ প্রয়োজনীয় কম্পিউটার সরঞ্জাম। দেশের প্রথম ডিজিটাল ভূমি কার্যালয় ফটিকছড়িতে চালুর বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ টি এম আজহারুল ইসলাম জানান, থাইল্যান্ডের সরকারি কার্যালয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার জন্য ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়। দলের সদস্য হিসেবে থাইল্যান্ডের সচিবালয়ে সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণ নেন তিনি। সে অভিজ্ঞতার আলোকে দেশে ফিরে এখানেও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চালুর বিষয় চিন্তা করেন। এরপর এটি বাস্তবায়ন হয় গত জানুয়ারি মাসে।

ডিজিটাল ভূমি জরিপে ব্যয় বেড়েছে
ডিজিটাল ভূমি জরিপে ২০১২ সালে এই প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। সেই ব্যয় এবার ৬৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৯২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ব্যয়ের সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদও বেড়েছে দুই বছর। চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল ভূমি মন্ত্রণালয়ের, এখন তা ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত চলবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ ও রেকর্ড প্রণয়ন এবং সংরক্ষণ এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ৫৫টি জেলার সাড়ে ৪ কোটি ভূমির খতিয়ান তৈরি করা হবে। খতিয়ানের ডাটা এন্ট্রি এবং তা সংরক্ষণ করা হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। এর ফলে ভূমির খতিয়ান সংরক্ষণ এবং ভূমির মালিকদের তা সরবরাহ করা সহজ হবে। প্রকল্প ব্যয় বাড়ার কারণের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, মেয়াদ দুই বছর বাড়ায় এর ব্যয়ও বেড়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ডেভেলপমেন্ট সফটওয়্যারের ইলেকট্রনিক ল্যান্ড রেকর্ড সিস্টেমের (ইএলআরএস) ওপর প্রতিটি জেলার রেকর্ড রুমের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে। এছাড়া সারাদেশে ইএলআরএস বাস্তবায়ন টিমকে সম্মানীত করা হবে। জাতীয় পর্যায় থেকে ডাটা এন্ট্রি কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য একটি ৪২ ইঞ্চি এলইডি টিভি কেনা হবে। ৫৫টি জেলার রেকর্ড রুমে ২ এমবিপিএস ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হবে। এছাড়া ডাটা এন্ট্রি হার ৬ টাকা থেকে ১৩ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ব্যয় বেড়েছে।

যেসব জেলায় কার্যক্রমের প্রস্তুতি চলছে
একনেক সভা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। জেলাগুলো হচ্ছে- ঢাকা, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর। চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, নোয়াখালী, চাঁদপুর ও কক্সবাজার জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া সিলেট বিভাগের সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। অন্যদিকে, বরিশাল বিভাগের ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। রাজশাহী বিভাগরে সাতটি জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এগুলো হচ্ছে- রাজশাহী, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট ও বগুড়া। রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা ও ঠাকুরগাঁও জেলা ভূমি জরিপ পদ্ধতি ডিজিটাল করা হবে। এছাড়া খুলনা বিভাগের বাগেরহাট, নড়াইল, সাতক্ষীরা, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও মেহেরপুর জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

২০১০ সালে যতটুকু কাজ হয়েছিল
ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে আধুনিক জরিপ যন্ত্রপাতি (জিপিএস, ইটিএস, ডাটা রেকর্ডার, কম্পিউটার, ম্যাপ প্রসেসিং সফটওয়া্যার, প্লটার, প্রিন্টার ইত্যাদি)'র সাহায্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নকশা ও খতিয়ান প্রণয়নের জন্য একটি পাইলট কর্মসূচির আওতায় ইতোমধ্যে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার ৫টি মৌজার ডিজিটাল জরিপ সম্পন্ন হয়েছে যা আপিল শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ৪৮টি মৌজার ডিজিটাল জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি মৌজার ডাটা সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়াও ভূমি রেকর্ড ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমের আওতায় ২০০৯-১০ অর্থবছরে ঢাকা মহানগর জরিপে ১৯১টি মৌজার ৪লাখ ৪১ হাজার ৫০৬টি খতিয়ান ও ৪ হাজার ৮৯টি মৌজা মাপ সীট ডিজিটালাইজেশন কাজ সম্পন্ন করে তা ভূমি রেকর্ড জরিপ অধিদফতরের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়।

২০১৬ সালে ৬৪ জেলার ভূমি অফিস ডিজিটাল হবে
ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ভূমি জরিপের প্রাচীন ও জটিল পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল জরিপ প্রবর্তনের জন্য সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলার ভূমি অফিসকে ডিজিটালাইজড করা হবে। এ লক্ষ্যে ভূমি জরিপ, রেকর্ড প্রণয়ন ও সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একটি পাইলট কর্মসূচির আওতায় ঢাকার সাভারের পাঁচটি মৌজার ডিজিটাল জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া নরসিংদীর পলাশে ৪৮টি মৌজার ডিজিটাল জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি রেকর্ড ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমের অধীনে ঢাকা মহানগর জরিপে ১৯১টি মৌজার ৪ লাখ ৪১ হাজার ৫০৬টি খতিয়ান এবং ৪ হাজার ৮০৯টি মৌজা ম্যাপ শিট ডিজিটালাইজেশনের কাজ শেষ করে তা ভূমি রেকর্ড জরিপ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় স্ট্রেদেনিং এক্সেস টু ল্যান্ড অ্যান্ড প্রপার্টি রাউটস ফর অল সিটিজেন অফ বাংলাদেশ শীর্ষক পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ভূমি প্রতিমন্ত্রী বলেন, সর্বশেষ জরিপে প্রণীত মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান এবং মিউটেশন খতিয়ানের ভিত্তিতে ৫৪টি উপজেলায় ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (ডিএলএমএস) প্রবর্তন করা হয়েছে। আগামী ২০১৬ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি জেলায় ডিজিটালাইজড ভূমি অফিস স্থাপন করা হবে। এতে করে জাল-জালিয়াতি ও জনদুর্ভোগ বহুলাংশে কমে আসবে।